দেশ ভ্রমণ প্রবন্ধ | Desh bhraman rochona in Bengali
Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.
Please briefly explain why you feel this question should be reported.
Please briefly explain why you feel this answer should be reported.
Please briefly explain why you feel this user should be reported.
দেশভ্রমণ শিক্ষার অঙ্গ। অথবা দেশভ্রমণের উপযােগিতা
ভূমিকা: ঘরকুনাে সংসারী মানুষ যে নেশার টানে ঘরছাড়া হয়, তারই নাম ভ্রমণ।সংকীর্ণ সীমার মধ্যে বাস করে মানুষের মন যখন হাঁপিয়ে উঠে, তখনই সে চায়। উন্মুক্ত প্রকৃতির প্রভাব সহজাত এই উন্মুক্ত বিশ্ব প্রকৃতির অনন্ত সৌন্দর্য-সুধা পান করতে। অজানাকে জানা, অদেখাকে দেখা, অচেনাকে চেনা মানুষের সহজাত প্রবণতা। আর এই প্রবণতাই মানুষকে ঠেলে নিয়ে চলেছে অরণ্য পথে, তুষারাচ্ছন্ন মেরু প্রদেশ, সমুদ্রতীর, মরু প্রান্তর আর পর্বত শৃঙ্গে।
পথ চলা আনন্দের উৎস : সদরের পিয়াসি মানুষ পথ চলতেই আনন্দ পায়। মানুষের মন চিরচঞ্চল সে মনে একট সাড়া পেলেই তাকে ঘরে বেঁধে রাখা দায়।
“ভোজনং যত্রতত্র শয়নং হট্ট মন্দিরে”
বহুদক সন্ন্যাসীর মতাে ওই মন্ত্র নিয়ে শুধুই পথ চলা। আর থেমে থাকা নয়, সীমার গণ্ডি পেরিয়ে অসীমের দিকে কেবলই- “হেথা নয়, অন্য কোথা অন্য কোনাে খানে।” ভ্রমণ সাহিত্য গুলি আমাদের অমূল্য সম্পদ। ভ্রমণ যারা করেছেন, তাদের বিবরণ পড়ে মন যেন তাদের পিছু পিছু ভ্রমণ করে বেড়ায়। কর্মক্লান্ত জীবনকে মুক্তি বা আনন্দ দেওয়ার জন্য যে ভ্রমণ, আধুনিক যুগেই তার সুত্রপাত হয়েছে।
শিক্ষা লাভের অঙ্গ : ভ্রমণ শুধু নিছক ঘুরে বেড়ানুই নয়। ছাত্র ছাত্রীদের পক্ষে ভ্রমণের গুরুত্ব অপরিসীম। বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তক হতে আমরা যে শিক্ষা লাভ করি, তাতে প্রত্যক্ষ জ্ঞান লাভ হয় না। আমরা ভুগােলে নানা দেশের কথা পড়ি। কত বিচিত্র দেশ বিচিত্র তার অধিবাসী, আরও বিচিত্র তার রীতিনীতি আর জীবনযাত্রা প্রণালী। তাছাড়া সুউচ্চ পর্বতের কথা, ধু-ধু মরুভূমির কথা, সাগরের অনন্ত জলরাশির কথা শুধু বইয়ে পড়ে সঠিক ভাবে জ্ঞান লাভ হয় না। প্রকৃতির বাণী কান পেতে শুনতে হলে প্রকৃতির পাশটিতে গিয়ে বসা চাই। পূর্ণ শিক্ষা লাভের জন্য তাই ভ্রমণ একান্ত জরুরি। দুঃখের বিষয় হল, আমাদের দেশে এখনও ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ভ্রমণের তেমন সুব্যবস্থা নেই। অথচ বিদেশে পৃথিবীর উন্নত দেশসমুহে দেশভ্রমণকে শিক্ষার অঙ্গ হিসাবেই গণ্য করা হয়।
দেশভ্রমণ না করার কুফল : স্বদেশে ক্ষুদ্রগণ্ডীর মধ্যে চিরকাল আবদ্ধ থাকলে আমাদের মন সাধারণতঃ সংকীর্ণ হয়ে পড়ে। এর ফলে ক্ষুদ্র স্বার্থ নিয়ে আমরা দলাদলি ও হানাহানি করি। পল্লীবাসীদের কুপমণ্ডুকতাই এর প্রধান কারণ। যারা অনেক দেশভ্রমণ করেছে তাদের মন উদার হয়, মনে সংকীর্ণতা থাকে না। তাই নানা জাতির সংস্পর্শে থাকার ফলে গ্রামের লােকের চাইতে শহরের লােকের উদারতা বেশি। দেশভ্রমণের ফলে মানুষ মাত্রেই বুঝতে পারে যে, পরস্পরের সঙ্গে যােগসূত্র না থাকলে নিজেকেই অসহায় করা হয়। দেশভ্রমণ অপরিহার্য। পাশ্চাত্য মহাদেশের উন্নত দেশগুলি আধুনিক বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে কৃষিকার্যে কীভাবে উন্নতি লাভ করছে, যন্ত্র শিল্পের প্রতিষ্ঠা করে কীভাবে অন্যান্য দেশের বাজার হস্তগত করছে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্বন্ধ কাভাবে স্থাপন করছে, দেশভ্রমণের দ্বারাই এসব বিষয়ে প্রত্যক্ষ জ্ঞান সঞ্চয় করা যায়। কোথায় কোন প্রয়ােজনীয় জিনিস সুলভে প্রচুর পাওয়া যায়, কোথায় কোন জিনিসের চাহিদা বেশি, দেশভ্রমণের ফলে তাও বিশেষ ভাবে জানতে পারা যায়।
অভিজ্ঞতা ও সৌন্দর্য বােধের প্রসার : মানুষ সৌন্দর্যের পুজারি। দেশ ভ্রুমণের ফলে সৌন্দর্যবােধ সঞ্চারিত হয়। জীবনের সামগ্রিক অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান ভাণডার সমৃদ্ধ হয়। প্রকৃতির নব নব সুন্দর্য দর্শন করে মানুষের রস পিপাসু মন পরিতৃপ্ত হয় । দেশ ভ্রমণের আনন্দ মনকে উন্নত ও বিকশিত করতে সাহায্য করে। ঘুরতে ঘুরতে পথ থেকে সে কুড়িয়ে যে জ্ঞান সঞ্চয় করে তার মূল্য কেতাবি বিদ্যার চেয়ে অনেক মূল্যবান হয় ।
দেশ ভ্রমণ, প্রাচীন ও আধুনিক যুগে : দেশ ভ্রমণ মানব সভ্যতার প্রাচীনতম প্রবৃত্তি। এজন্য বহু লোকের মধ্যে একটা আজন্ম ভবঘুরে প্রবৃত্তি চোখে পড়ে।মানুষ যখন ঘর বেঁধে চাষবাস করতে শেখেনি, তখন সে এক স্থান হতে অন্যস্থানে ঘুরে মানুষ বেড়াত।একশতাব্দী পূর্বেও মানুষ ভ্রমণ করেছে বহু কষ্ট স্বীকার করে, ফা-হিয়ান, ইবন বতুতা প্রভৃতি পরিব্রাজকগণ অপর দেশের শিক্ষা, সভ্যতা, ধর্ম প্রভৃতি জানবার আগ্রহে ভারতে এসেছিলেন। তাদের ভ্রমণ কাহিনি হতে প্রাচীন ভারতের বিবরণ পাওয়া যায়।কলম্বাস, ভাস্কো-ডা-গামা, মঙ্গোপাঙন এর মতন ভ্রমণকারীদের দ্বারা পৃথিবীর বহু অজ্ঞাত স্থান আবিষ্কৃত হয়েছে। আজ কাল অনেক দুর্গম স্থানে ও ভ্রমণার্থীদের যাওয়া ও থাকা খাওয়ার সবন্দোবস্ত করা হয়েছে। দেশভ্রমণ আজ অনেকের কাছেই একটা নেশা বা পরিণত হয়েছে। শীতে,গ্রীষ্মে বা পুজোর ছুটিতে আজ দলে দলে মানুষ বেরিয়ে পড়ে ঘর ছেড়ে।
উপসংহার : ভ্রমণ সত্যিই সুখের। আজকাল ভ্রমণের সঙ্গে পর্যটন শিল্পের বিষয়টিও জড়িয়ে আছে। নিজ দেশে দেশি ও বিদেশি ভ্রমণার্থীদের আকৃষ্ট করতে পারলে জাতীয় ভাণ্ডারে অনেক বিদেশি মুদ্রা অর্জন সম্ভব হয়।বিগত দিনের তুলনায় আজ ভ্রমণ ক্রমশই বাড়ছে, এটা সুখবর, সন্দেহ নেই। দেশে দেশে মানুষের যাতায়াত যত বাড়বে, তত বিভিন্ন দেশের মানুষের মধ্যে মেলামেশা, তাদের সভ্যতা সংস্কৃতি, পরিচয় সম্পর্কে আদান প্রদান সম্ভব হবে। আন্তর্জাতিক শান্তি স্থাপনের দূত হিসেবে ভ্রমণার্থীরাই সবচেয়ে উপযুক্ত। দেশভ্রমণের এটিও একটি মস্ত উপযােগিতা বলা যেতে পারে।