বঙ্গভাষা কবিতার বিষয়বস্তু ও শিল্পমূল্য বর্ণনা কর?
Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.
Please briefly explain why you feel this question should be reported.
Please briefly explain why you feel this answer should be reported.
Please briefly explain why you feel this user should be reported.
উত্তর:
‘বঙ্গভাষা’ কবিতায় প্রকাশিত হয়েছে মাতৃভাষার মহিমান্বিত গৌরবের প্রতি কবির সুগভীর হৃদয়াবেগ। এতে ব্যক্ত হয়েছে। কবির আত্মজীবনের ভ্রান্তি, কবিতা রচনার সঠিক দিকনির্দেশনার তথ্য এবং বাংলা ভাষার ঐশ্বর্যমন্ডিত রূপের ভাবচিত্র।। আধুনিক বাংলা কবিতার সূচনালগ্নে মধুসূদন অমিত্রাক্ষর ছন্দরীতি ও ব্যক্তিমানুষের অন্তর্বেদনা প্রকাশে মনােযােগী ছিলেন। সনেট রূপকল্পের পেত্রার্কীয়-শেক্সপীয়রীয় রীতির সম্মিলন ঘটিয়ে তিনি রচনা করেন আলােচ্য কবিতাটি। বহুভাষাবিদ মধুসূদনের প্রত্যাশা ছিল ইংরেজি ভাষায় কাব্যচর্চা করে যশস্বী হবেন। কিন্তু এই পন্থা ভিক্ষাবৃত্তি বা অন্যের সম্পদ হরণের মতই নীচকাজ, এতে প্রকৃত সুখ ও আত্মমর্যাদা থকে না। অন্য ভাষায় কাব্যচর্চার প্রয়াস হয়ে ওঠে কৃত্রিমতার নামান্তর, যা এক সময় কবিকে করে বিফলতায় যন্ত্রণাবিদ্ধ এবং ব্যর্থ। কবি একে অভিহিত করেছেন পদ্মবনের পরিবর্তে শৈবাল নিয়ে মগ্ন হয়ে থাকার অর্থহীন ক্রিয়া হিসেবে। উচ্চাভিলাষে মােহগ্রস্ত কবি আত্মগানিতে পীড়িত হয়ে স্বভাষায় প্রত্যাবর্তন করেন ও নিজের সমগ্র জীবনধারার পরিবর্তন ঘটান। কবিতা রচনার অন্তর্ল্ডেরণাই তাকে এই সত্যের পথ দেখায়। মাতৃভাষার গর্ভেই রয়েছে তার প্রতিভার যােগ্য ক্ষেত্র ও কবিতা সৃষ্টির উৎস-উপাদান। মানুষের প্রকৃত স্বরূপ মাতৃভাষাতে প্রকাশক্ষম ও স্বতঃস্ফূর্ত হয়, এই চিরন্তন সত্য উপলব্ধি করে কবিচিত্ত হয়ে ওঠে নবজাগ্রত ও আবেগময়।
‘বঙ্গভাষা’ কবিতায় বিধৃত হয়েছে এই আত্মস্বাক্ষরিত ও সচেতন অন্তলোকের উদ্ভাস। বাংলাভাষার ঐশ্বর্যের প্রতি প্রিয় সম্ভাষণ ও শ্রদ্ধাবােধে কবিতাটি অনন্য। এখানে আরাে উন্মােচিত হয়েছে ভিন্নভাষা ও সংস্কৃতিতে লিপ্ত থাকার ভ্রান্তি থেকে মুক্তির আনন্দ। কবিচিত্তে জেগেছে মাতৃভাষা-প্রীতি ও সচেতনতা, নিজস্ব সংস্কৃতির প্রতি অন্তর্নিহিত আবেগ এবং সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে গভীর আত্মবিশ্বাস। একে বলা যায় অন্ধকার চিত্তগুহায় সূর্যালােকের স্পর্শলাভ এবং মাতৃভাষায় ঐতিহ্যরূপ বিশাল রত্নখনির আবিষ্কার। কবির এই আবিষ্কার ও প্রত্যাবর্তনই পরবর্তীকালে তাকে অভিষিক্ত করেছে বাংলা সাহিত্যের বরপুত্র হিসেবে।
বঙ্গভাষা’ কবিতাটি মধুসূদনের কবিসত্তার বন্ধনমােচন ও বিকাশের সংহত শিল্পভাষ্য। এতে ব্যঞ্জনাময় হয়ে উঠেছে বাংলা ভাষা বিষয়ক অনুভূতির চিরায়ত প্রকাশ, পরবর্তীকালের আরও অনেক ভাষা বিষয়ক কবিতার মমতাঘন ও সংকল্প-শুদ্ধ রূপের পূর্বাভাস। আমাদের ২১ ফেব্রুয়ারির রক্তাপুত সংগ্রাম ও আবেগ-আর্তির যে মহত্তম ইতিহাস রয়েছে, কবিতাটি যেন তারই বীজাঙ্কুর।