পত্রপুট (১৯৩৬) কাব্য-এ ষােলাে সংখ্যক কবিতা – ‘উদ্ভান্ত সেই আদিম যুগে’ (নাম আফ্রিকা) কবি অমিয় চক্রবর্তী লিখে পাঠাবার জন্য অনুরােধ করায় ২৮ শে মাঘ ১৩৪৩, ইং ১২ ফ্রেব্রুয়ারি ১৯৩৬ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই কবিতাটি রচনা করেন।
কবিতাটি প্রথমে প্রবাসী (চৈত্র ১৩৪৩) ও পরে কবিতাটির পত্রপুটের দ্বিতীয় সংস্করণে (১৩৪৫) প্রকাশিত হয়। ৩রা অক্টোবর, ১৯৩৫ ফ্যাসিস্ত মুসােলিনির নির্দেশে ইতালীয় আক্রমণকারী সৈন্যদল অ্যাবিসিনিয়ায় (ইথিওপিয়া) আক্রমণ করে। রবীন্দ্রনাথ এখানে তার প্রতিবাদ করে আফ্রিকা, ‘ছায়াচ্ছন্ন আফ্রিকার সকল বন লাঞ্ছনার রক্তাক্ত ইতিহাসকে স্মরণ করে এক অনবদ্য কাব্য রূপ দিয়েছেন। বেদনায় ভারাক্রান্ত চিত্তে একান্ত মমতায় এক লাঞ্ছিত কৃয়া মানবীর রূপ এই কবিতায় তিনি নির্মাণ করেছেন। আবেদন রেখেছেন “দাঁড়াও ঐ মান-হারা মানবীর দ্বারে।”
In the restless tides of that primordial dawn
When the creator himself despaired of crafting you
And struck angrily at the fresh clay again and again,
In that hour of impatience and rage
The arms of the brave seas
Plucked you from the clasp of the lands of the East
Removing you far from them all, Africa
To bind you within cages of great trees standing guard
Where miserly light illumined your fate
There in silent wait you bided your time,
Reading the mysteries of the unreachable,
And learning the incomprehensible signs hidden in land, sea and sky
That magic that is beyond any seen in nature
Wove spells through your unconscious mind.
You mocked the terrible
Dressed as a grotesque lampooning of the fierce,
You wished to defeat fear itself by donning it as disguise
Alas, shadowed beauty,
How well you hid yourself under veil of night
Your human form secreted away
From those whose eyes shower contempt
They came with shackles forged from cruel iron
Those who bear claws sharper than the wolves that roam the land,
Then came the ones who make trade with human coin
Those whose pride blinds them, their hearts darker than your sunless forests.
The naked hunger of the civilized
Stripping them down to their inner shameless brutality.
In the forests drenched by your wordless cries
The very soil sullied by your blood and sweat;
Under the feet of their hob-nailed boots,
Mutilated your flesh
Marks forever your maligned history.
At that very moment in their own lands
Church bells rang out in glorious worship
At morning and evensong, in the name of an all merciful God;
While their children played in each mother’s lap;
And poets raised their wondrous tunes
In praise of all things bright and beautiful.
When today on the western horizon
Sunset holds it breath in fear of a new storm,
When the beasts ride out of secret caves
And sounds of ill omen declare the beginning of day’s end,
Come forth, Oh poet of change
Stand by the last ray of this evening’s sun
Where this unfortunate woman waits,
And say, ‘Forgive me!’
In the midst of fierce delirium,
Let that be the final reparation made by your civilization.
Durba
আফ্রিকা/ Africa
পত্রপুট (১৯৩৬) কাব্য-এ ষােলাে সংখ্যক কবিতা – ‘উদ্ভান্ত সেই আদিম যুগে’ (নাম আফ্রিকা) কবি অমিয় চক্রবর্তী লিখে পাঠাবার জন্য অনুরােধ করায় ২৮ শে মাঘ ১৩৪৩, ইং ১২ ফ্রেব্রুয়ারি ১৯৩৬ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই কবিতাটি রচনা করেন।
কবিতাটি প্রথমে প্রবাসী (চৈত্র ১৩৪৩) ও পরে কবিতাটির পত্রপুটের দ্বিতীয় সংস্করণে (১৩৪৫) প্রকাশিত হয়। ৩রা অক্টোবর, ১৯৩৫ ফ্যাসিস্ত মুসােলিনির নির্দেশে ইতালীয় আক্রমণকারী সৈন্যদল অ্যাবিসিনিয়ায় (ইথিওপিয়া) আক্রমণ করে। রবীন্দ্রনাথ এখানে তার প্রতিবাদ করে আফ্রিকা, ‘ছায়াচ্ছন্ন আফ্রিকার সকল বন লাঞ্ছনার রক্তাক্ত ইতিহাসকে স্মরণ করে এক অনবদ্য কাব্য রূপ দিয়েছেন। বেদনায় ভারাক্রান্ত চিত্তে একান্ত মমতায় এক লাঞ্ছিত কৃয়া মানবীর রূপ এই কবিতায় তিনি নির্মাণ করেছেন। আবেদন রেখেছেন “দাঁড়াও ঐ মান-হারা মানবীর দ্বারে।”
আফ্রিকা কবিতার সম্পূর্ণ সারাংশ ও ব্যাখ্যার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
উদ্ভ্রান্ত সেই আদিম যুগে
স্রষ্টা যখন নিজের প্রতি অসন্তোষে
নতুন সৃষ্টিকে বারবার করছিলেন বিধ্বস্ত,
তাঁর সেই অধৈর্যে ঘন-ঘন মাথা-নাড়ার দিনে
রুদ্র সমুদ্রের বাহু
প্রাচী ধরিত্রীর বুকের থেকে
ছিনিয়ে নিয়ে গেল তোমাকে, আফ্রিকা,
বাঁধলে তোমাকে বনস্পতির নিবিড় পাহারায়
কৃপণ আলোর অন্তঃপুরে।
সেখানে নিভৃত অবকাশে তুমি
সংগ্রহ করছিলে দুর্গমের রহস্য,
চিনছিলে জলস্থল-আকাশের দুর্বোধ সংকেত,
প্রকৃতির দৃষ্টি-অতীত জাদু
মন্ত্র জাগাচ্ছিল তোমার চেতনাতীত মনে।
বিদ্রূপ করছিলে ভীষণকে
বিরূপের ছদ্মবেশে,
শঙ্কাকে চাচ্ছিলে হার মানাতে
আপনাকে উগ্র করে বিভীষিকার প্রচণ্ড মহিমায়
তাণ্ডবের দুন্দুভিনিনাদে।
হায় ছায়াবৃতা,
কালো ঘোমটার নীচে
অপরিচিত ছিল তোমার মানবরূপ
উপেক্ষার আবিল দৃষ্টিতে।
এল ওরা লোহার হাতকড়ি নিয়ে
নখ যাদের তীক্ষ্ণ তোমার নেকড়ের চেয়ে,
এল মানুষ-ধরার দল
গর্বে যারা অন্ধ তোমার সূর্যহারা অরণ্যের চেয়ে।
সভ্যের বর্বর লোভ
নগ্ন করল আপন নির্লজ্জ অমানুষতা।
তোমার ভাষাহীন ক্রন্দনে বাষ্পাকুল অরণ্যপথে
পঙ্কিল হল ধূলি তোমার রক্তে অশ্রুতে মিশে;
দস্যু-পায়ের কাঁটা-মারা জুতোর তলায়
বীভৎস কাদার পিণ্ড
চিরচিহ্ন দিয়ে গেল তোমার অপমানিত ইতিহাসে।
সমুদ্রপারে সেই মুহূর্তেই তাদের পাড়ায় পাড়ায়
মন্দিরে বাজছিল পুজোর ঘণ্টা
সকালে সন্ধ্যায়, দয়াময় দেবতার নামে;
শিশুরা খেলছিল মায়ের কোলে;
কবির সংগীতে বেজে উঠছিল
সুন্দরের আরাধনা।
আজ যখন পশ্চিমদিগন্তে
প্রদোষকাল ঝঞ্ঝাবাতাসে রুদ্ধশ্বাস,
যখন গুপ্তগহ্বর থেকে পশুরা বেরিয়ে এল,
অশুভ ধ্বনিতে ঘোষণা করল দিনের অন্তিমকাল,
এসো যুগান্তরের কবি,
আসন্ন সন্ধ্যার শেষ রশ্মিপাতে
দাঁড়াও ওই মানহারা মানবীর দ্বারে,
বলো “ক্ষমা করো’–
হিংস্র প্রলাপের মধ্যে
সেই হোক তোমার সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী।
Hridoy
English Translation of the poem Africa
By- Rabindranath Tagore
Date- 10th February, 1937
In the restless tides of that primordial dawn
When the creator himself despaired of crafting you
And struck angrily at the fresh clay again and again,
In that hour of impatience and rage
The arms of the brave seas
Plucked you from the clasp of the lands of the East
Removing you far from them all, Africa
To bind you within cages of great trees standing guard
Where miserly light illumined your fate
There in silent wait you bided your time,
Reading the mysteries of the unreachable,
And learning the incomprehensible signs hidden in land, sea and sky
That magic that is beyond any seen in nature
Wove spells through your unconscious mind.
You mocked the terrible
Dressed as a grotesque lampooning of the fierce,
You wished to defeat fear itself by donning it as disguise
Alas, shadowed beauty,
How well you hid yourself under veil of night
Your human form secreted away
From those whose eyes shower contempt
They came with shackles forged from cruel iron
Those who bear claws sharper than the wolves that roam the land,
Then came the ones who make trade with human coin
Those whose pride blinds them, their hearts darker than your sunless forests.
The naked hunger of the civilized
Stripping them down to their inner shameless brutality.
In the forests drenched by your wordless cries
The very soil sullied by your blood and sweat;
Under the feet of their hob-nailed boots,
Mutilated your flesh
Marks forever your maligned history.
At that very moment in their own lands
Church bells rang out in glorious worship
At morning and evensong, in the name of an all merciful God;
While their children played in each mother’s lap;
And poets raised their wondrous tunes
In praise of all things bright and beautiful.
When today on the western horizon
Sunset holds it breath in fear of a new storm,
When the beasts ride out of secret caves
And sounds of ill omen declare the beginning of day’s end,
Come forth, Oh poet of change
Stand by the last ray of this evening’s sun
Where this unfortunate woman waits,
And say, ‘Forgive me!’
In the midst of fierce delirium,
Let that be the final reparation made by your civilization.