বনলতা সেন কবিতার সারমর্ম ও বিষয়বস্তু | bonolota sen poem explanation in bengali
Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.
Please briefly explain why you feel this question should be reported.
Please briefly explain why you feel this answer should be reported.
Please briefly explain why you feel this user should be reported.
বনলতা সেন কবিতার সারাংশ ও মূলভাব
সারাংশ –
অনেক আবেগ আকাঙ্ক্ষা আকুলতা নিয়ে অন্বেষায় স্বপ্ন যখন ক্লান্ত, পথকে মনে হয়েছে দূরপ্রসারী, জীবনের চারিদিকে সফেন সমুদ্র উদবেল হয়ে উঠছে কিন্তু হাঁটার শেষ হয়নি – সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগর পর্যন্ত — বিম্বিসার অশােকের ধূসর জগৎ পেরিয়ে সুদূর বিদর্ভ নগরে হালভাঙা দিশেহারা নাবিকের কল্প জগতের সন্ধানে, এমনই সময় মিলেছে দুদণ্ডের শান্তি – ‘পাখির নীড়ের মতাে চোখ তুলে বলেছে সে এতদিন কোথায় ছিলেন ? আতপ্ত হৃদয় অবশেষে দিনের শেষে, সন্ধ্যা নামে জোনাকি জ্বলে, সেই অন্ধকারে সব কাজ সেরে মুখােমুখি বসবার অবকাশ পায়।
প্রসঙ্গ ব্যাখ্যাঃ
হাজার বছর ধরে পথ হাঁটিতেছি – হাজার বছর ধরে কোনাে মানুষের পক্ষে পথ হাঁটা সম্ভব নয়, তথাপি এ শব্দ গুচ্ছের ব্যঞ্জনায় সুদূর অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত ব্যাপ্ত অন্তহীন পরিক্রমা বােঝাতে ব্যবহার করা হয়েছে। এটি বাস্তবের সত্য নয়, কবির অনুভবের সত্য। জীবনের সফেন সমুদ্র মন্থন করতে করতে এই অনন্ত যাত্রার জন্যই ক্লান্ত প্রাণ দুদণ্ডের শান্তি প্রত্যাশা করে। অন্বিষ্ট সেই অধরা ভাবের যদি মূর্ত প্রত্যক্ষ রূপ হয় বনলতা সেন, তার পক্ষেই সে শান্তির আশ্রয় দেওয়া সম্ভব।
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক — ক্লান্তি ও মৃত্যুচেতনা জীবনানন্দের মতাে এ যুগের অনেক আধুনিক কবির অন্যতম প্রধান সুর। এই চেতনা অবশ্য সব সময় দৈহিক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে জাগ্রত হয়নি। যুগের বন্ধ্যা রূপ, অচরিতার্থ জীবনের আকাঙ্ক্ষা থেকেই এর উৎসার। রবীন্দ্র-কবিভাবনায় রােমান্টিক হৃদয়াবেগ মানসী, মানসসুন্দরীর ভাব ব্যঞ্জনায় প্রকাশিত হত। আধুনিক কবিরা বস্তুবিশ্বে, ভাব ব্যঞ্জনার পরিবর্তে সব কিছুকেই শরীরী করতে চেয়েছেন, তাই জীবনানন্দও তাঁর কাব্যে প্রধানত বাস্তব সূত্রকে অবলম্বন করে তাকে প্রকাশ করেছেন। অন্তহীন পথ চলার শেষ নেই, তথাপি ক্লান্ত দেহমন-এর ভারাক্রান্ত রূপটি এ ছত্রে প্রকাশ পেয়েছে।
আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছেন নাটোরের বনলতা সেন
অধ্যাপিকা সুমিতা চক্রবর্তী- -এর ব্যাখ্যায় বলেছেন—“বিশেষ লক্ষ্য করতে হবে ‘দু-দণ্ড’ শব্দ বন্ধ। এই শান্তি ক্ষণকালীন, কারণ মানুষের যাত্রাপথে আশ্রয়, শান্তি ও স্থিতির ধ্রুব আশ্বাস নিয়ে কোনাে বনলতা সেনের আবির্ভাব ঘটেনি। ইতিহাসের কোনাে কোনাে সিদ্ধ লগ্নে চকিত-উদ্ভাসে হঠাৎ কখনও দেখা যায় তাকে, যেমন কবি দেখেছিলেন তাঁর বিশ্বাসী কৈশােরে, নাটোরের কোনাে এক বসন্তের ভােরে।”
সব পাখি ঘরে আসে – সব নদী ফুরায় – এ-জীবনের সব লেনদেন—সব নদী’ শব্দ যুগের সংকেত একটু ব্যাখ্যাসাপেক্ষ। দিনান্তে পাখির ঘরে ফেরা, তার শান্তি নীড়ে ফেরা। নদী ফুরায় জীবনের লেনদেন – অংশটির তাৎপর্য হল নদী ও মানুষের জীবন বস্তুত একটি প্রবহমান ধারা – জীবনের লেনদেন মিটিয়ে যেমন মানুষের জীবনাবসান, নদীও তার উৎস থেকে নিরন্তর চলার পর সে মহাসমুদ্রে তার চলার অবসান হয় অর্থাৎ সমুদ্রে লীন হয়ে নদী তার নিজস্বতা হারায়। মানুষও তার জীবনের সমস্ত কর্ম অবসানে, জীবনের সমস্ত দেনাপাওনা সেরে, নীল মৃত্যু উজাগর অন্ধকারে বিলীন হয়।