রচনাঃ গ্রন্থাগার বা লাইব্রেরী | Library Essay in Bengali language
Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.
Please briefly explain why you feel this question should be reported.
Please briefly explain why you feel this answer should be reported.
Please briefly explain why you feel this user should be reported.
গ্রন্থাগার
ভূমিকা: গ্রন্থাগার সভ্য মানুষের জীবনযাত্রায় এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। বর্তমান কালে অধিকাংশ শিক্ষিত লোকের বাড়িতেই জ্ঞান আনন্দলাভের জন্য গৃহ লাইব্রেরি গড়ে উঠেছে। বর্তমানে যে সকল সরকারি গ্রন্থাগার স্থাপিত হয়েছে তাদের প্রয়োজনীয়তা আমাদের মত শিক্ষাবঞ্চিত দেশের পক্ষে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি বা সাধারণ গ্রন্থাগার সকল মানুষের জ্ঞানের পিপাসা মেটায় আনন্দ দান করে। দেশের অজ্ঞতার অন্ধকার দূরীকরণে গ্রন্থাগারের ভূমিকা বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
গ্রন্থাগার জ্ঞানের মিলনক্ষেত্র: গ্রন্থাগার বা লাইব্রেরী জ্ঞান ধারার মহামিলন ক্ষেত্র। এখানে অতীত,বর্তমান ও ভবিষ্যৎ মিলিত হয়ে আছে নানা দেশের পুস্তকের মাধ্যমে এটি সকল জ্ঞানের মিলন তীর্থ। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সাহিত্যের চিন্তাধারা আমাদেরশান্তি দেয়, আনন্দ দেয়, আর দেয় উদারতার শিক্ষা।
গ্রন্থাগারের উদ্ভব : জ্ঞান-পিপাসু মানুষের কাছে গ্রন্থাগার আধুনিক সভ্যতার অবদান। প্রাচীন কালের মানুষও আধুনিক মানুষের মতাে জ্ঞান লাভ ও বিদ্যা শিক্ষার প্রয়ােজনে গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠায় মনােযােগী হয়েছিল। তখনকার দিনে গ্রন্থ বলতে অবশ্য বর্তমানকালের সহজে বহন করার মতাে কাগজের গ্রন্থ ছিল না। ছিল খােদাই করা শিলায় লিপি। তারপর তালপাতায় ও ভুজপত্রে লিখিত গ্রন্থ বের হয়। মধ্যযুগে তুলট কাগজের আবিষ্কার হওয়ায় এ কাগজে লেখা আরম্ভ হয়।
প্রাচীন কালের গ্রন্থাগার : চীনদেশে প্রথম কাগজ আবিষ্কৃত হয় এবং সেখানে অনেক বড় গ্রন্থাগার সুপ্রতিষ্ঠিত ছিল। প্রাচীন ভারতে তক্ষশিলা, নালন্দা প্রভৃতি বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় বড় গ্রন্থাগার ছিল। এসব গ্রন্থাগার শত শত ছাত্র ও বিদেশি পরিব্রাজকদের জ্ঞান-তৃষ্ণা মিটাত।
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ গ্রন্থাগার : জ্ঞানের চর্চার প্রয়ােজনের সঙ্গে সঙ্গে এবং মুদ্রণযন্ত্রের প্রবর্তনের ফলে পৃথিবীর সকল দেশেই বড় বড় গ্রন্থাগার স্থাপিত হয়েছে। পৃথিবীর বৃহৎ গ্রন্থাগার ছিল চারটি – প্যারিস নগরীর বিবলিওথেক ন্যাশন্যাল, লণ্ডনের বৃটিশ মিউজিয়াম লাইব্রেরি, আমেরিকার ওয়াশিংটন নগরের লাইব্রেরি অব কংগ্রেস এবং সােভিয়েত রাশিয়ার লেলিন লাইব্রেরি। এগুলির দ্বারা ছাত্র-ছাত্রীরা খুবই উপকৃত হতেন।
গ্রন্থাগারের শ্রেণি : গ্রন্থাগার দুই প্রকার – ব্যক্তিগত গ্রন্থাগার ও সাধারণ গ্রন্থাগার। ব্যক্তি বিশেষের গ্রন্থাগারে পুস্তকের সংখ্যা সাধারণত কিছু কম। এ সব গ্রন্থাগার গড়ে উঠে পণ্ডিত, শিক্ষক ও গবেষকদের নিজস্ব প্রয়ােজনে। এর দ্বারা বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিরাই উপকৃত হন। অপরদিকে, সাধারণ গ্রন্থাগারের লক্ষ্য থাকে সকল শ্রেণির পাঠকের চাহিদা পূরণ। সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের চেষ্টায় প্রতিষ্টিত হয় সাধারণ গ্রন্থাগার। এ গ্রন্থাগারে ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকলের বই পড়ার সুযােগসুবিধা থাকে। শুধু বর্তমান যুগেই নয় প্রাচীন যুগেও প্রচলন ছিল সাধারণ গ্রন্থাগারের ভারতের বৌদ্ধ বিহারগুলির বিশাল গ্রন্থাগার ধ্যান মগ্ন ঋষির নীরবতায় করে চলত সকল মানুষের হিতসাধনের তপস্যা।
বর্তমানের গ্রন্থাগার : আমাদের দেশে কয়েকটি গ্রন্থাগার আছে – কলকাতার জাতীয় গ্রন্থাগার, এশিয়াটিক সােসাইটির গ্রন্থাগার, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের গ্রন্থাগার। তাছাড়া দেশের প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজে,স্কুলে ও বড় বড় শহরে সাধারণ পাঠের জন্য গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাছাড়া কিছু ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগারও আমাদের দেশে দেখা যায়।
গ্রন্থাগার সভ্যতা ও প্রগতির পরিচায়ক : সমস্ত জগতের শিক্ষিত সমাজ আজ গ্রন্থাগারের বিরাট প্রয়ােজনীয়তা উপলব্ধি করতে পেরেছে। তাই গ্রন্থাগার আন্দোলনের সাহায্যে তারা চেয়েছেন গ্রন্থাগারের উন্নতি সাধন করতে। কারণ প্রত্যেক দেশেরই সর্বশ্রেণির মানুষের কাছে শিক্ষা ও জ্ঞানের আলাে বিতরণ করতে হলে সরকারের শুধু শিক্ষা নীতি করলেই চলবে না তার সঙ্গে সঙ্গে লাইব্রেরির সংখ্যাও বৃদ্ধি করতে হবে। কারণ জাতীয় জীবনে গ্রন্থাগার-এক মহৎ কর্তব্য পালন করে চলছে, গ্রন্থাগারই পারে অজ্ঞতার অন্ধকার দূর করে জ্ঞানের আলাে জ্বালিয়ে দিতে।
উপসংহার : গ্রন্থাগার দেশের গ্রন্থ-সচেতন মানসিকতার পরিচায়ক। গত জাতির সভ্যতার বার্তা বহন করে অগ্রগতির পথে নিয়ে যায়। গ্রন্থাগার নিরক্ষরতা দূরীকরণে যেমন সহায়ক, তেমনি জ্ঞান বৃদ্ধিরও সহায়ক। সুতরাং দেশে যত বেশি লাইব্রেরি বা গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠিত হবে ততই জ্ঞান পিপাসু মানুষ প্রেরণা ও অমৃতের স্বাদ করবে আস্বাদন। আর হবে জাতির উন্নতি।