মোবাইলের সুব্যবহার এবং কূ ব্যবহার | use and abuse of mobile in bengali
Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.
Please briefly explain why you feel this question should be reported.
Please briefly explain why you feel this answer should be reported.
Please briefly explain why you feel this user should be reported.
মোবাইল ফোন
ভূমিকা: বিবর্তনের সোপান বেয়ে আসে সভ্যতা। সভ্যতা হচ্ছে মানবজাতির বুদ্ধি, মেধা ও অভিজ্ঞতার সমষ্টি। এ মানব সভ্যতায় নানা সময় সৃষ্টি হয়েছে নানা বিষ্ময়কর জিনিস। বর্তমানে আমরা এক নতুন শতাব্দীতে এসে হাজির হয়েছি, যেখানে বিশ্বময় চলছে বিজ্ঞানের জয় জয়কার। এ বিংশ শতাব্দীতে বিজ্ঞানের একটি বিষ্ময়কর আবিষ্কার হচ্ছে মোবাইল ফোন।
মোবাইল ফোন কী: মোবাইল ফোন বা সেলুলার ফোন বা হ্যান্ড ফোন হচ্ছে তারবিহীন টেলিফোন বিশেষ। “Mobile” ইংরেজি শব্দ যার বাংলা প্রতিশব্দ হলো ‘ভ্রাম্যমান’ বা ‘স্থানান্তর যোগ্য’। এই ফোন সহজে যেকোনো স্থানে বহন এবং ব্যবহার করা যায় বলে একে মোবাইল ফোন নামকরণ করা হয়েছে। এটি ষড়ভূজ আকৃতির ক্ষেত্র বা এক-একটি সেল নিয়ে কাজ করে বলে একে সেলফোনও বলা হয়। মূলত মোবাইল ফোন যোগাযোগের একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্র বিশেষ। এটি বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে কাজ করে বলে অনেক বড় ভৌগোলিক এলাকায় নিরবিচ্ছিন্নভাবে সংযোগ দিতে পারে। শুধু কথা বলাই নয়, মোবাইল ফোন এ মাধ্যমে আরো অনেক সেবা গ্রহণ করা যায় যেমনঃ- এস,এম,এস, ই-মেইল, ইন্টারনেট, ব্লু-টুথ ব্যবহার ইত্যাদি।
মোবাইল ফোনের আবিষ্কার: সেলুলার ফোন প্রারম্ভিকভাবে জাহাজ ও ট্রেনে এনালগ রেডিও কমিউনিকেশন হিসেবে ব্যবহার করা হত। মোবাইল ফোনের উদ্ভাবক হলেন- ড. মার্কিন কুপার। তিনি ১৯৭৩ সালের ৩ এপ্রিল সফলভাবে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করেন। মোবাইল ফোন প্রথম বাজারে আসে ১৯৮৩ সালে।
মোবাইল ফোনের ব্যবহার: আজ থেকে প্রায় বছর ত্রিশ পূর্বে মোবাইল ফোনের ব্যবহার শুরু হয়। বর্তমানে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮৭% মোবাইল ফোন যোগাযোগের আওতায় এসেছে। ধনী ও শৌখিন পরিবারেই শুরুর দিকে মোবাইল ফোনের ব্যবহার দেখা যেত। কিন্তু বর্তমানে শিল্পপতি থেকে রিক্সাচালক পর্যন্ত এটি ব্যবহার করে থাকে। ২০১২ সালের এক জরিপে দেখা গেছে বাংলাদেশে ১১ কোটিরও বেশি গ্রাহক মোবাইল ফোন যোগাযোগের আওতায় রয়েছে। বর্তমানে এটির জনপ্রিয়তা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মোবাইল ফোনের প্রয়োজনীয়তা: বর্তমান বিজ্ঞানের অগ্রগতির যুগে দেশে বিদেশে যোগাযোগসহ শিক্ষা, সংস্কৃতি, আচার ব্যবহার ইত্যাদির সাথে সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের প্রয়োজনীয়তা অবশ্যম্ভাবী। তথ্য ও প্রযুক্তি ছাড়া বর্তমান মানব জীবন কল্পনা করা যায় না। এসব উপাদানের উৎস হিসেবেও মোবাইল ফোনের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। এককথায় বর্তমানে বিশ্বকে হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে আজকের মোবাইল ফোন।
যোগাযোগের মাধ্যম: সুষ্ঠুভাবে জীবন ধারণের জন্য অপরিহার্য শর্ত হলো যোগাযোগ। দ্রুত যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হলো মোবাইল ফোন। এর মাধ্যমে আমরা দূরের স্থানে বা মানুষের খবর জানতে পারি। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যথাসময়ে নির্দিষ্ট স্থানে পাঠাতে পারি।
ইন্টারনেট ব্যবহার: বর্তমান বিশ্বকে বিশ্ব গ্রামে পরিণত করেছে যে উপাদানটি তার নাম ইন্টারনেট। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আমরা ইন্টারনেট ব্যবহার করে ই-মেইলসহ বিশ্বের যেকোনো বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে পারি। এছাড়া মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইন্টানেট থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি ডাউনলোড করা যায়।
চিত্তবিনোদনের মাধ্যম: মোবাইল ফোন মানুষের চিত্তবিনোদনের চাহিদা পূরণের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। মোবাইল ফোনে গান শোনা, ভিডিও দেখা, ছবি তোলা, খেলা করা ইত্যাদি মাধ্যমে মানুষের চিত্তবিনোদনের চাহিদা পূরণ হয়।
বিবিধ সেবা প্রদান: মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সাধারণ জনগণকে বিভিন্ন সেবা প্রদান করা যায়, যা তাদের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। এছাড়া বিভিন্ন অপারেটর কর্তৃক স্বাস্থ্য সেবা, কৃষি সেবা ইত্যাদি প্রদান করা হয়ে থাকে যা জনসাধারণকে সুখী ও সমৃদ্ধ জীবনযাপনে সাহায্য করে। এটি রেডিও, টেলিভিশন থেকে শুরু করে ই-মেইল, ইন্টানেটের সকল সুবিধা প্রদান করে থাকে।
মোবাইল ফোনের অপকারিতা: প্রযুক্তির দ্রুত উন্নয়নের ফলে মোবাইল ফোন অতি প্রয়োজনীয় জিনিসে পরিণত হয়েছে। এর হাজারো উপকারিতা থাকলেও অপব্যবহার যেভাবে বেড়ে চলেছে তাতে যেন মোবাইল ফোনের অপকারিতার পাল্লাই দিন দিন ভারি হচ্ছে। নিম্নেমোবাইল ফোনের কিছু ক্ষতিকর দিক তুলে ধরা হলো-
স্বাস্থের ক্ষতি: মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে মানুষের শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। যেমন-
– একটানা ৩ মিনিটের বেশি ফোনে কথা বললে রক্ত চলাচলের ব্যাঘাত ঘটে।
– মোবাইল ফোনের রেডিয়েশনে ক্যানসার হতে পারে।
– মোবাইল ফোন ব্যবহারে মানুষের প্রজনন ক্ষমতা কমে যায়।
অপরাধ বৃদ্ধি: বর্তমানে অপরাধ জগতের প্রধান অবলম্বন মোবাইল ফোন। সন্ত্রাস, খুন, ছিনতাই, চাদাবাজি, অপহরণ, মাদক ব্যবসাসহ যাবতীয় অপকর্মে এটি ব্যবহার হচ্ছে। এছাড়া সাইবার অপরাধ বৃদ্ধিতে মোবাইল ফোন সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এছাড়া মোবাইল ফোন সময় নষ্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মেধা ও চরিত্র নষ্ট করছে। যুবসমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের কারণ হিসেবে মোবাইল ফোন অনেকাংশে দায়ী।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় মোবাইল ফোন বর্তমান বিশ্বের আশীর্বাদ। যদিও এর কতিপয় নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে তবুও সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করলে এর ব্যবহার আমাদের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে। মোবাইল ফোনের ইতিবাচক ব্যবহারই উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে আমাদেরকে অনেক দূর নিয়ে যাবে। অতএব মোবাইল ফোনের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে আমাদের সচেতন হতে হবে।