কবিতা : প্রার্থনা | Prarthana Poem by Rabindranath Tagore in Bengali
Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.
Please briefly explain why you feel this question should be reported.
Please briefly explain why you feel this answer should be reported.
Please briefly explain why you feel this user should be reported.
প্রার্থনা নাম দিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বেশ কয়েকটি কবিতা রয়েছে। সেগুলো বিভিন্ন কাব্যগ্রন্থে আলাদা ভাবে প্রকাশিত হয়েছে। প্রার্থনা নাম দিয়ে যে কবিতাগুলো পাওয়া যায় সেগুলো নিম্নরুপ।
প্রার্থনা
কাব্যগ্রন্থ – চৈতালি
আজি কোন্ ধন হতে বিশ্ব আমারে
কোন্ জনে করে বঞ্চিত
তব চরণকমলরতনরেণুকা
অন্তরে আছে সঞ্চিত।
কত নিঠুর কঠোর ঘরশে ঘরষে
মর্মমাঝারে শল্য বরষে
তবু প্রাণমন পীযূষপরশে
পলে পলে পুলকাঞ্চিত!
আজি কিসের পিপাসা মিটিল না, ওগো
পরম-পরান-বল্লভ।
চিতে চিরসুধা করে সঞ্চার, তব
সকরুণ করপল্লব।
হেথা কত দিনে রাতে অপমানঘাতে
আছি নতশির গঞ্জিত,
তবু চিত্তললাট তোমারি স্বকরে
রয়েছে তিলকরঞ্জিত।
হেথা কে আমার কানে কঠিন বচনে
বাজায় বিরোধঝঞ্ঝনা!
প্রাণে দিবসরজনী উঠিতেছে ধ্বনি
তোমারি বীণার গুঞ্জনা।
নাথ, যার যাহা আছে তার তাই থাক্,
আমি থাকি চিরলাঞ্ছিত।
শুধু তুমি এ জীবনে নয়নে নয়নে
থাকো থাকো চিরবাঞ্ছিত।
প্রার্থনা
কাব্যগ্রন্থ – খেয়া
আমি বিকাব না কিছুতে আর
আপনারে।
আমি দাঁড়াতে চাই সভার তলে
সবার সাথে এক সারে।
সকালবেলার আলোর মাঝে
মলিন যেন না হই লাজে,
আলো যেন পশিতে পায়
মনের মধ্যে একবারে।
বিকাব না, বিকাব না
আপনারে।
আমি বিশ্ব-সাথে রব সহজ
বিশ্বাসে।
আমি আকাশ হতে বাতাস নেব
প্রাণের মধ্যে নিশ্বাসে।
পেয়ে ধরার মাটির স্নেহ
পুণ্য হবে সর্ব দেহ,
গাছের শাখা উঠবে দুলে
আমার মনের উল্লাসে।
বিশ্বে রব সহজ সুখে
বিশ্বাসে।
আমি সবায় দেখে খুশি হব
অন্তরে।
কিছু বেসুর যেন বাজে না আর
আমার বীণা-যন্তরে।
যাহাই আছে নয়ন ভরি
সবই যেন গ্রহণ করি,
চিত্তে নামে আকাশ-গলা
আনন্দিত মন্ত্র রে।
সবায় দেখে তৃপ্ত রব
অন্তরে।
প্রার্থনা
কাব্যগ্রন্থ – গীতাঞ্জলী
চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির,
জ্ঞান যেথা মুক্ত, যেথা গৃহের প্রাচীর
আপন প্রাঙ্গণতলে দিবসশর্বরী
বসুধারে রাখে নাই খন্ড ক্ষুদ্র করি,
যেথা বাক্য হৃদয়ের উৎসমুখ হতে
উচ্ছ্বসিয়া উঠে, যেথা নির্বারিত স্রোতে
দেশে দেশে দিশে দিশে কর্মধারা ধায়
অজস্র সহস্রবিধ চরিতার্থতায়–
যেথা তুচ্ছ আচারের মরুবালুরাশি
বিচারের স্রোতঃপথ ফেলে নাই গ্রাসি,
পৌরুষেরে করে নি শতধা; নিত্য যেথা
তুমি সর্ব কর্ম চিন্তা আনন্দের নেতা–
নিজ হস্তে নির্দয় আঘাত করি, পিতঃ,
ভারতেরে সেই স্বর্গে করো জাগরিত।
প্রার্থনা
কাব্যগ্রন্থ – কড়ি ও কোমল
তুমি কাছে নাই ব’লে হেরো সখা, তাই
“আমি বড়ো’ “আমি বড়ো’ করিছে সবাই।
সকলেই উঁচু হয়ে দাঁড়ায়ে সমুখে
বলিতেছে, “এ জগতে আর কিছু নাই।’
নাথ, তুমি একবার এসো হাসিমুখে
এরা সবে ম্লান হয়ে লুকাক লজ্জায়–
সুখ দুঃখ টুটে যাক তব মহাসুখে,
যাক আলো অন্ধকার তোমার প্রভায়।
নহিলে ডুবেছি আমি, মরেছি হেথায়,
নহিলে ঘুচে না আর মর্মের ক্রন্দন–
শুষ্ক ধূলি তুলি শুধু সুধাপিপাসায়,
প্রেম ব’লে পরিয়াছি মরণবন্ধন।
কভু পড়ি কভু উঠি, হাসি আর কাঁদি–
খেলাঘর ভেঙে প’ড়ে রচিছে সমাধি।
প্রার্থনা
কাব্যগ্রন্থ – পরিশেষ
কামনায় কামনায় দেশে দেশে যুগে যুগান্তরে
নিরন্তর নিদারুণ দ্বন্দ্ব যবে দেখি ঘরে ঘরে
প্রহরে প্রহরে; দেখি অন্ধ মোহ দুরন্ত প্রয়াসে
বুভুক্ষার বহ্নি দিয়ে ভস্মীভূত করে অনায়াসে
নিঃসহায় দুর্ভাগার সকরুণ সকল প্রত্যাশা,
জীবনের সকল সম্বল; দুঃখীর আশ্রয়বাসা
নিশ্চিন্তে ভাঙিয়া আনে দুর্দাম দুরাশাহোমানলে
আহুতি-ইন্ধন জোগাইতে; নিঃসংকোচে গর্বে বলে,
আত্মতৃপ্তি ধর্ম হতে বড়ো; দেখি আত্মম্ভরী প্রাণ
তুচ্ছ করিবারে পারে মানুষের গভীর সম্মান
গৌরবের মৃগতৃষ্ণিকায়; সিদ্ধির স্পর্ধার তরে
দীনের সর্বস্ব সার্থকতা দলি দেয় ধূলি-‘পরে
জয়যাত্রাপথে; দেখি ধিক্কারে ভরিয়া উঠে মন,
আত্মজাতি-মাংসলুব্ধ মানুষের প্রাণনিকেতন
উন্মীলিছে নখে দন্তে হিংস্র বিভীষিকা; চিত্ত মম
নিষ্কৃতিসন্ধানে ফিরে পিঞ্জরিত বিহঙ্গমসম,
মুহূর্তে মুহূর্তে বাজে শৃঙ্খলবন্ধন-অপমান
সংসারের। হেনকালে জ্বলি উঠে বজ্রাগ্নি-সমান
চিত্তে তাঁর দিব্যমূর্তি, সেই বীর রাজার কুমার
বাসনারে বলি দিয়া বিসর্জিয়া সর্ব আপনার
বর্তমানকাল হতে নিষ্ক্রমিলা নিত্যকাল-মাঝে
অনন্ত তপস্যা বহি মানুষের উদ্ধারের কাজে
অহমিকা-বন্দীশালা হতে। – ভগবান বুদ্ধ তুমি,
নির্দয় এ লোকালয়, এ ক্ষেত্রই তব জন্মভূমি।
ভরসা হারাল যারা, যাহাদের ভেঙেছে বিশ্বাস,
তোমারি করুণাবিত্তে ভরুক তাদের সর্বনাশ, —
আপনারে ভুলে তারা ভুলুক দুর্গতি। – আর যারা
ক্ষীণের নির্ভর ধ্বংস করে, রচে দুর্ভাগ্যের কারা
দুর্বলের মুক্তি রুধি, বোসো তাহাদেরি দুর্গদ্বারে
তপের আসন পাতি; প্রমাদবিহ্বল অহংকারে
পড়ুক সত্যের দৃষ্টি; তাদের নিঃসীম অসম্মান
তব পুণ্য আলোকেতে লভুক নিঃশেষ অবসান।
তব পুণ্যে আলোকেতে লভুক নি:শেষ অবসান।