আপনার কাছ হতে বহুদূরে পালাবার লাগি
হে সুন্দর, হে অলক্ষ্য, তোমার প্রসাদ আমি মাগি,
তোমার আহ্বানবাণী। আজ তব বাজুক বাঁশরি,
চিত্তভরা শ্রাবণপ্লাবনরাগে,– যেন গো পাসরি
নিকটের তাপতপ্ত ঘূর্ণিবায়ে ক্ষুব্ধ কোলাহল,
ধূলির নিবিড় টান পদতলে। রয়েছি নিশ্চল
সারাদিন পথপার্শ্বে; বেলা হয়ে এল অবসান,
ঘন হয়ে আসে ছায়া, শ্রান্ত সূর্য করিছে সন্ধান
দিগন্তে অন্তিম শান্তি। দিবা যথা চলেছে নির্ভীক
চিহ্নহীন সঙ্গহীন অন্ধকার পথের পথিক
আপনার কাছ হতে অন্তহীন অজানার পানে
অসীমের সংগীতে উদাসী,– সেইমতো আত্মদানে
আমারে বাহির করো, শূন্যে শূন্যে পূর্ণ হ’ক সুর,
নিয়ে যাক পথে পথে হে অলক্ষ্য, হে মহাসুদূর।
মুক্তি
কাব্যগ্রন্থঃ পূরবী
মুক্তি নানা মূর্তি ধরি দেখা দিতে আসে নানা জনে —
এক পন্থা নহে।
পরিপূর্ণতার সুধা নানা স্বাদে ভুবনে ভুবনে
নানা স্রোতে বহে।
সৃষ্টি মোর সৃষ্টি-সাথে মেলে যেথা, সেথা পাই ছাড়া,
মুক্তি যে আমারে তাই সংগীতের মাঝে দেয় সাড়া,
সেথা আমি খেলা-খ্যাপা বালকের মতো লক্ষ্মীছাড়া
লক্ষ্যহীন নগ্ন নিরুদ্দেশ।
সেথা মোর চির নব, সেথা মোর চিরন্তন শেষ।
মাঝে মাঝে গানে মোর সুর আসে যে সুরে, হে গুণী,
তোমারে চিনায়।
বেঁধে দিয়ো নিজহাতে সেই নিত্য সুরের ফাল্গুনী
আমার বীণায়।
তা হলে বুঝিব আমি ধূলি কোন্ ছন্দে হয় ফুল
বসন্তের ইন্দ্রজালে অরণ্যেরে করিয়া ব্যাকুল,
নব নব মায়াচ্ছায়া কোন্ নৃত্যে নিয়ত দোদুল
বর্ণ বর্ণ ঋতুর দোলায়।
তোমারি আপন সুর কোন্ তালে তোমারে ভোলায়।
যেদিন আমার গান মিলে যাবে তোমার গানের
সুরের ভঙ্গিতে
মুক্তির সংগমতীর্থ পাব আমি আমারি প্রাণের
আপন সংগীতে।
সেদিন বুঝিব মনে নাই নাই বস্তুর বন্ধন,
শূন্যে শূন্যে রূপ ধরে তোমারি এ বীণার স্পন্দন —
নেমে যাবে সব বোঝা, থেমে যাবে সকল ক্রন্দন,
ছন্দে তালে ভুলিব আপনা,
বিশ্বগীতপদ্মদলে স্তব্ধ হবে অশান্ত ভাবনা।
সেদিন আমার রক্তে শুনা যাবে দিবসরাত্রির
নৃত্যের নূপুর।
নক্ষত্র বাজাবে বক্ষে বংশীধ্বনি আকাশযাত্রীর
আলোকবেণুর।
সেদিন বিশ্বের তৃণ মোর অঙ্গে হবে রোমাঞ্চিত,
আমার হৃদয় হবে কিংশুকের রক্তিমালাঞ্ছিত;
সেদিন আমার মুক্তি, যবে হবে, হে চিরবাঞ্ছিত,
তোমার লীলায় মোর লীলা —
যেদিন তোমার সঙ্গে গীতরঙ্গে তালে তালে মিলা।
মুক্তি
কাব্যগ্রন্থঃ বীথিকা
জয় করেছিনু মন তাহা বুঝে নাই,
চলে গেনু তাই
নতশিরে।
মনে ক্ষীণ আশা ছিল ডাকিবে সে ফিরে।
মানিল না হার,
আমারে করিল অস্বীকার।
বাহিরে রহিনু খাড়া
কিছুকাল, না পেলেম সাড়া।
তোরণদ্বারের কাছে
চাঁপাগাছে
দক্ষিণে বাতাস থরথরি
অন্ধকারে পাতাগুলি উঠিল মর্মরি।
দাঁড়ালেম পথপাশে,
ঊর্ধ্বে বাতায়ন-পানে তাকালেম ব্যর্থ কী আশ্বাসে।
দেখিনু নিবানো বাতি–
আত্মগুপ্ত অহংকৃত রাতি
কক্ষ হতে পথিকেরে হানিছে ভ্রূকুটি।
এ কথা ভাবি নি মনে, অন্ধকারে ভূমিতলে লুটি
হয়তো সে করিতেছে খান্ খান্
তীব্রঘাতে আপনার অভিমান।
দূর হতে দূরে গেনু সরে
প্রত্যাখ্যানলাঞ্ছনার বোঝা বক্ষে ধরে।
চরের বালুকা ঠেকা
পরিত্যক্ত তরীসম রহিল সে একা।
আশ্বিনের ভোরবেলা চেয়ে দেখি পথে যেতে যেতে
ক্ষীণ কুয়াশায় ঢাকা কচিধানখেতে
দাঁড়িয়ে রয়েছে বক,
দিগন্তে মেঘের গুচ্ছে দুলিয়াছে উষার অলক।
সহসা উঠিল বলি হৃদয় আমার,
দেখিলাম যাহা দেখিবার
নির্মল আলোকে
মোহমুক্ত চোখে।
কামনার যে পিঞ্জরে শান্তিহীন
অবরুদ্ধ ছিনু এতদিন
নিষ্ঠুর আঘাতে তার
ভেঙে গেছে দ্বার–
নিরন্তর আকাঙক্ষার এসেছি বাহিরে
সীমাহীন বৈরাগ্যের তীরে।
আপনারে শীর্ণ করি
দিবসশর্বরী
ছিনু জাগি
মুষ্টিভিক্ষা লাগি।
উন্মুক্ত বাতাসে
খাঁচার পাখির গান ছাড়া আজি পেয়েছে আকাশে।
সহসা দেখিনু প্রাতে
যে আমারে মুক্তি দিল আপনার হাতে
সে আজও রয়েছে পড়ি
আমারি সে ভেঙে-পড়া পিঞ্জর আঁকড়ি।
মুক্তি
কাব্যগ্রন্থঃ পুনশ্চ
বাজিরাও পেশোয়ার অভিষেক হবে
কাল সকালে।
কীর্তনী এসেছে গ্রামের থেকে,
মন্দিরে ছিল না তার স্থান।
সে বসেছে অঙ্গনের এক কোণে
পিপুল গাছের তলায়।
একতারা বাজায় আর কেবল সে ফিরে ফিরে বলে,
“ঠাকুর, তোমায় কে বসালো
কঠিন সোনার সিংহাসনে।’
রাত তখন দুই প্রহর,
শুক্লপক্ষের চাঁদ গেছে অস্তে।
দূরে রাজবাড়ির তোরণে
বাজছে শাঁখ শিঙে জগঝম্প,
জ্বলছে প্রদীপের মালা।
কীর্তনী গাইছে,
“তমালকুঞ্জে বনের পথে
শ্যামল ঘাসের কান্না এলেম শুনে,
ধুলোয় তারা ছিল যে কান পেতে,
পায়ের চিহ্ন বুকে পড়বে আঁকা
এই ছিল প্রত্যাশা।’
আরতি হয়ে গেছে সারা–
মন্দিরের দ্বার তখন বন্ধ,
ভিড়ের লোক গেছে রাজবাড়িতে।
কীর্তনী আপন মনে গাইছে–
“প্রাণের ঠাকুর,
এরা কি পাথর গেঁথে তোমায় রাখবে বেঁধে।
তুমি যে স্বর্গ ছেড়ে নামলে ধুলোয়
তোমার পরশ আমার পরশ
মিলবে ব’লে।’
 
Nibedita Paul
মুক্তি নামে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বেশ কয়েকটি কবিতা লিখেছেন যেগুলো বিভিন্ন কাব্যগ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছে। মুক্তি নামে যে কবিতাগুলো রয়েছে সেগুলো হলঃ
মুক্তি
কাব্যগ্রন্থঃ পরিশেষ
১
আমারে সাহস দাও, দাও শক্তি, হে চিরসুন্দর,
দাও স্বচ্ছ তৃপ্তির আকাশ, দাও মুক্তি নিরন্তর
প্রত্যহের ধূলিলিপ্ত চরণপতনপীড়া হতে,
দিয়ো না দুলিতে মোরে তরঙ্গিত মুহূর্তের স্রোতে,
ক্ষোভের বিক্ষেপবেগে। শ্রাবণসন্ধ্যার পুষ্পবনে
গ্লানিহীন যে সাহস সুকুমার যূথীর জীবনে–
নির্মম বর্ষণঘাতে শঙ্কাশূন্য প্রসন্ন মধুর,
মুহূর্তের প্রাণটিতে ভরি তোলে অনন্তের সুর,
সরল আনন্দহাস্যে ঝরি পড়ে তৃণশয্যা ‘পরে,
পূর্ণতার মূর্তিখানি আপনার বিনম্র অন্তরে
সুগন্ধে রচিয়া তোলে; দাও সেই অক্ষুব্ধ সাহস,
সে আত্মবিস্মৃত শক্তি, অব্যাকুল,সহজে স্ববশ
আপনার সুন্দর সীমায়,– দ্বিধাশূন্য সরলতা
গাঁথুক শান্তির ছন্দে সব চিন্তা, মোর সব কথা।
২
আপনার কাছ হতে বহুদূরে পালাবার লাগি
হে সুন্দর, হে অলক্ষ্য, তোমার প্রসাদ আমি মাগি,
তোমার আহ্বানবাণী। আজ তব বাজুক বাঁশরি,
চিত্তভরা শ্রাবণপ্লাবনরাগে,– যেন গো পাসরি
নিকটের তাপতপ্ত ঘূর্ণিবায়ে ক্ষুব্ধ কোলাহল,
ধূলির নিবিড় টান পদতলে। রয়েছি নিশ্চল
সারাদিন পথপার্শ্বে; বেলা হয়ে এল অবসান,
ঘন হয়ে আসে ছায়া, শ্রান্ত সূর্য করিছে সন্ধান
দিগন্তে অন্তিম শান্তি। দিবা যথা চলেছে নির্ভীক
চিহ্নহীন সঙ্গহীন অন্ধকার পথের পথিক
আপনার কাছ হতে অন্তহীন অজানার পানে
অসীমের সংগীতে উদাসী,– সেইমতো আত্মদানে
আমারে বাহির করো, শূন্যে শূন্যে পূর্ণ হ’ক সুর,
নিয়ে যাক পথে পথে হে অলক্ষ্য, হে মহাসুদূর।
মুক্তি
কাব্যগ্রন্থঃ পূরবী
মুক্তি নানা মূর্তি ধরি দেখা দিতে আসে নানা জনে —
এক পন্থা নহে।
পরিপূর্ণতার সুধা নানা স্বাদে ভুবনে ভুবনে
নানা স্রোতে বহে।
সৃষ্টি মোর সৃষ্টি-সাথে মেলে যেথা, সেথা পাই ছাড়া,
মুক্তি যে আমারে তাই সংগীতের মাঝে দেয় সাড়া,
সেথা আমি খেলা-খ্যাপা বালকের মতো লক্ষ্মীছাড়া
লক্ষ্যহীন নগ্ন নিরুদ্দেশ।
সেথা মোর চির নব, সেথা মোর চিরন্তন শেষ।
মাঝে মাঝে গানে মোর সুর আসে যে সুরে, হে গুণী,
তোমারে চিনায়।
বেঁধে দিয়ো নিজহাতে সেই নিত্য সুরের ফাল্গুনী
আমার বীণায়।
তা হলে বুঝিব আমি ধূলি কোন্ ছন্দে হয় ফুল
বসন্তের ইন্দ্রজালে অরণ্যেরে করিয়া ব্যাকুল,
নব নব মায়াচ্ছায়া কোন্ নৃত্যে নিয়ত দোদুল
বর্ণ বর্ণ ঋতুর দোলায়।
তোমারি আপন সুর কোন্ তালে তোমারে ভোলায়।
যেদিন আমার গান মিলে যাবে তোমার গানের
সুরের ভঙ্গিতে
মুক্তির সংগমতীর্থ পাব আমি আমারি প্রাণের
আপন সংগীতে।
সেদিন বুঝিব মনে নাই নাই বস্তুর বন্ধন,
শূন্যে শূন্যে রূপ ধরে তোমারি এ বীণার স্পন্দন —
নেমে যাবে সব বোঝা, থেমে যাবে সকল ক্রন্দন,
ছন্দে তালে ভুলিব আপনা,
বিশ্বগীতপদ্মদলে স্তব্ধ হবে অশান্ত ভাবনা।
সঁপি দিব সুখ দুঃখ আশা ও নৈরাশ্য যত-কিছু
তব বীণাতারে —
ধরিবে গানের মূর্তি, একান্তে করিয়া মাথা নিচু
শুনিব তাহারে।
দেখিব তাদের যেথা ইন্দ্রধনু অকস্মাৎ ফুটে,
দিগন্তে বনের প্রান্তে উষার উত্তরী যেথা লুটে,
বিবাগী ফুলের গন্ধ মধ্যাহ্নে যেথায় যায় ছুটে —
নীড়ে-ধাওয়া পাখির ডানায়
সায়াহ্নগগন যেথা দিবসেরে বিদায় জানায়।
সেদিন আমার রক্তে শুনা যাবে দিবসরাত্রির
নৃত্যের নূপুর।
নক্ষত্র বাজাবে বক্ষে বংশীধ্বনি আকাশযাত্রীর
আলোকবেণুর।
সেদিন বিশ্বের তৃণ মোর অঙ্গে হবে রোমাঞ্চিত,
আমার হৃদয় হবে কিংশুকের রক্তিমালাঞ্ছিত;
সেদিন আমার মুক্তি, যবে হবে, হে চিরবাঞ্ছিত,
তোমার লীলায় মোর লীলা —
যেদিন তোমার সঙ্গে গীতরঙ্গে তালে তালে মিলা।
মুক্তি
কাব্যগ্রন্থঃ বীথিকা
জয় করেছিনু মন তাহা বুঝে নাই,
চলে গেনু তাই
নতশিরে।
মনে ক্ষীণ আশা ছিল ডাকিবে সে ফিরে।
মানিল না হার,
আমারে করিল অস্বীকার।
বাহিরে রহিনু খাড়া
কিছুকাল, না পেলেম সাড়া।
তোরণদ্বারের কাছে
চাঁপাগাছে
দক্ষিণে বাতাস থরথরি
অন্ধকারে পাতাগুলি উঠিল মর্মরি।
দাঁড়ালেম পথপাশে,
ঊর্ধ্বে বাতায়ন-পানে তাকালেম ব্যর্থ কী আশ্বাসে।
দেখিনু নিবানো বাতি–
আত্মগুপ্ত অহংকৃত রাতি
কক্ষ হতে পথিকেরে হানিছে ভ্রূকুটি।
এ কথা ভাবি নি মনে, অন্ধকারে ভূমিতলে লুটি
হয়তো সে করিতেছে খান্ খান্
তীব্রঘাতে আপনার অভিমান।
দূর হতে দূরে গেনু সরে
প্রত্যাখ্যানলাঞ্ছনার বোঝা বক্ষে ধরে।
চরের বালুকা ঠেকা
পরিত্যক্ত তরীসম রহিল সে একা।
আশ্বিনের ভোরবেলা চেয়ে দেখি পথে যেতে যেতে
ক্ষীণ কুয়াশায় ঢাকা কচিধানখেতে
দাঁড়িয়ে রয়েছে বক,
দিগন্তে মেঘের গুচ্ছে দুলিয়াছে উষার অলক।
সহসা উঠিল বলি হৃদয় আমার,
দেখিলাম যাহা দেখিবার
নির্মল আলোকে
মোহমুক্ত চোখে।
কামনার যে পিঞ্জরে শান্তিহীন
অবরুদ্ধ ছিনু এতদিন
নিষ্ঠুর আঘাতে তার
ভেঙে গেছে দ্বার–
নিরন্তর আকাঙক্ষার এসেছি বাহিরে
সীমাহীন বৈরাগ্যের তীরে।
আপনারে শীর্ণ করি
দিবসশর্বরী
ছিনু জাগি
মুষ্টিভিক্ষা লাগি।
উন্মুক্ত বাতাসে
খাঁচার পাখির গান ছাড়া আজি পেয়েছে আকাশে।
সহসা দেখিনু প্রাতে
যে আমারে মুক্তি দিল আপনার হাতে
সে আজও রয়েছে পড়ি
আমারি সে ভেঙে-পড়া পিঞ্জর আঁকড়ি।
মুক্তি
কাব্যগ্রন্থঃ পুনশ্চ
বাজিরাও পেশোয়ার অভিষেক হবে
কাল সকালে।
কীর্তনী এসেছে গ্রামের থেকে,
মন্দিরে ছিল না তার স্থান।
সে বসেছে অঙ্গনের এক কোণে
পিপুল গাছের তলায়।
একতারা বাজায় আর কেবল সে ফিরে ফিরে বলে,
“ঠাকুর, তোমায় কে বসালো
কঠিন সোনার সিংহাসনে।’
রাত তখন দুই প্রহর,
শুক্লপক্ষের চাঁদ গেছে অস্তে।
দূরে রাজবাড়ির তোরণে
বাজছে শাঁখ শিঙে জগঝম্প,
জ্বলছে প্রদীপের মালা।
কীর্তনী গাইছে,
“তমালকুঞ্জে বনের পথে
শ্যামল ঘাসের কান্না এলেম শুনে,
ধুলোয় তারা ছিল যে কান পেতে,
পায়ের চিহ্ন বুকে পড়বে আঁকা
এই ছিল প্রত্যাশা।’
আরতি হয়ে গেছে সারা–
মন্দিরের দ্বার তখন বন্ধ,
ভিড়ের লোক গেছে রাজবাড়িতে।
কীর্তনী আপন মনে গাইছে–
“প্রাণের ঠাকুর,
এরা কি পাথর গেঁথে তোমায় রাখবে বেঁধে।
তুমি যে স্বর্গ ছেড়ে নামলে ধুলোয়
তোমার পরশ আমার পরশ
মিলবে ব’লে।’
 
সেই পিপুল-তলার অন্ধকারে
একা একা গাইছিল কীর্তনী,
আর শুনছিল আরেকজনা গোপনে–
বাজিরাও পেশোয়া।
শুনুছিল সে–
“তুমি আমায় ডাক দিয়েছ আগল-দেওয়া ঘরের থেকে,
আমায় নিয়ে পথের পথিক হবে।
ঘুচবে তোমার নির্বাসনের ব্যথা,
ছাড়া পাবে হৃদয়-মাঝে।
থাক্ গে ওরা পাথরখানা নিয়ে
পাথরের বন্দীশালায়
অহংকারের-কাঁটার-বেড়া-ঘেরা।’
রাত্রি প্রভাত হল।
শুকতারা অরুণ-আলোয় উদাসী।
তোরণদ্বারে বাজল বাঁশি বিভাসে ললিতে।
অভিষেকের স্নান হবে,
পুরোহিত এল তীর্থবারি নিয়ে।
রাজবাড়ির ঠাকুরঘর শূন্য।
জ্বলছে দীপশিখা,
পূজার উপচার পড়ে আছে–
বাজিরাও পেশোয়া গেছে চলে
পথের পথিক হয়ে।