হাল ছেড়ো না মাঝি কবিতা | haal cherona majhi lyrics
Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.
Please briefly explain why you feel this question should be reported.
Please briefly explain why you feel this answer should be reported.
Please briefly explain why you feel this user should be reported.
Haal cherona majhi by Sanjiv Bandhapadhay
হাল ছেড়ো না মাঝি (সঞ্জীব চন্দ্র চট্টোপ্যাধায়)
প্রেম আর বেল একই স্বভাবের, সময় হলে পড়বেই–
প্রেম কি যাচিলে মিলে, আপনি উদয় হয় শুভযোগ পেলে;
– এ সেই অর্ধকুম্ভ, পূর্ণচন্দ্রের মত,
গ্রহে গ্রহে যোগ হবে তবেই হবে।
আমিই সেই পিয়ন কোর্টের পেয়াদা, সমন আমি ধরাবই;
চিঠি আমি গুজবই!
যখন বাড়ি ফিরছে, তখন হবে না; ধোলাইয়ের ভয় আছে!
যখন পাড়া ছেড়ে যাচ্ছে, তখন পেছন পেছন যেতে হবে–
বে-পাড়ায় গিয়ে নির্জনে কুটুস।
এবার সুযোগ এসে গেল- সে চলছে, আমি চলছি-
মাঝে হাত কুড়ির ব্যবধান-বেশ যাচ্ছিল!
হটাৎ ঘুরে গেল! আবার বাড়ী মুখো;
আমার পাশ দিয়ে হনহন করে হেঁটে বাড়ী চলল- –
কিছু ভুলে-টুলে গেছে হয়তো!
এরকম মেয়ে-ছেলে আমি লাইফে দেখিনি!
-এসব মেয়ে-ছেলে সংসার করবে কি করে?
যার কোন মতি-ই স্থির নেই’
আমিও যদি হটাৎ ফিরি, তাহলে লোকে সন্দেহ করতে পারে
তাই অকারণে বেশ কিছু-দূর সামনে হেঁটে গেলাম;
প্রেমের ভীত আর বাড়ীর ভীত এই জাতের ব্যাপার-
খেটে-খুঁটে তৈরী করতে হয়!
রোদে পুড়ে, জলে ভিজে,
বেকার একটা চক্কর মেরে
আমি এলুম গোপীদা-র দোকানে, গোপীদার কচুরীর দোকান।
গোপীদা বললে – কী হল? তুমি গেলে ও-দিকে,
ও এলো এ-দিকে ধেড়িয়েছ নিশ্চয়ই! কেস-টা কি?
–বললাম কেস আবার কি; নেঁজে খেলছে-
মহা ধরিবাজ, আগেই বলেছিলুম;
মেয়ে-ছেলে কি চিজ্-রে বাবা-
শোন বসন্ত, তুমি একটা কাজ কর!
ছোট-বেলা থেকে শুনে আসছি- বীর ভোগ্যা বসুন্ধরা;
বসুন্ধরা মানে তো মেয়ে-
তুমি- তুমি, তুমি বীর হও!
বীর হও? বীর হব কি করে? যুদ্ধ করবো?
আরে-শোন না; আমাদের পাঁড়ায় একটা বড় বদ-মেজাজী ষাঁড় আছে জানো- তো ?
ওই ষাড়টার পিঠে তুমি চেপে বসে তুমি পাড়া-মহল্লা প্রদক্ষিণ কর।
— প্রমাণ করো যে তুমি বীর।
তোমার খুব নাম হবে, আর সেই নামের-টানে সে তোমার কাছে আসবে।
আমি জানি এরকম রসিকতা আমায় অনেক সহ্য করতে হবে-
গোপীদা বললে, শোন বসন্ত; আর একটা কাজ তুমি করতে পারো।
তুমি এখন বেশ কিছুদিন শিবের মাথায় জল ঢালো-
মেয়েরা যদি শিবের মাথায় জল ঢেলে বর পায় তাহলে তুমিও বউ পাবে।
কিন্তু, বৌ পেলে খাওয়াবে কি? রোজগার-পাতি তো কিছু নেই,
– নাহ্, লোকটার মাথায় কিস্সু নেই, সব গুলিয়ে ফেলেছে;
প্রেম আর বিয়ে – সব গুলিয়ে ফেলেছে এক্কেবারে।
সারাটা জীবন ট্যাটে বসে পয়সা আর পয়সা-
আর ঢামার-মতো একটা ভূঁড়ি।
না পড়েছে কবিতা, না পড়েছে উপন্যাস-
আরে – প্রেম হচ্ছে- খুকখুক কাশি, রক্ত, সমাধি, আধুনিক গান-
তোমার সমাধি ফুলে-ফুলে ঢাকা;
প্রেম বলে নেই, তুমি নেই-
প্রেমিক মরলে চিতায় পুড়ানো হয় না; সমাধি দেয়া হয়;
আর তার পাশে থাকে শিউলি, বকুল—
গোপীটার যদি রবীন্দ্রনাথের গানটাও একটু মন দিয়ে শুনতো-
তাহলে অনেক কিছু বুঝতে পার-তো!
আরে পড়তে হবে না, শুধু কান-টা গানের দিকে রাখা;
এ গানটা প্রায়ই হয়- আমি জেনে-শুনে বিষ করেছি পান’
গান-টা আমার একটু একটু আসে- জানালা খুললে যেমন উনুনের ধোঁয়া আসে অটোমেটিক আসে!
বেশ ধরেছিলুম- জেনে-শুনে বিষ করেছি পান’- গলা পরিস্কার,
সুর-টাও বেশ লেগেছিল – গোপে পাঠা বলল-
এতো আত্মহত্যার কেস!
বুঝে গেলুম- গোপী যে লেভেলের লোক তাতে
ওর বাপের ক্ষমতা হবে না এ গানের মানে বোঝার!
–আরে প্রেম যে একটা কত্ত বড় কাজ, কী দহণ, কী জ্বালা
– গোপীর একটাই জ্বালা, ধারের পয়সা আদায়ের জ্বালা
পাওনাদারের কাছে তলব করার জ্বালা;
একবোরে কোর্স ম্যাটেরিয়েল- কী আর করি!
নিজেই আপন মনে গাইতে লাগলাম-
“প্রাণের আশা ছেড়ে সঁপেছি প্রাণ
আমি জেনে শুনে বিষ করেছি পান
যতই দেখি তারে ততই দহি-
আপন-মন জ্বালা নিরবে সহি
তবু পারিনে দুরে যেতে – মরিতে আসি
লইগো বুক পেতে অনল বান- আমি জেনে-শুনে বিষ করেছি পান-
রবীন্দ্রনাথ ইজ রবীন্দ্রনাথ, কি বোধ, পারসেপশন, কনসেপশন, রিয়্যালাইজেশন-
সকলের মনে ঢুকে বসে আছে- ই্শ্বরের মতো।
– এই গান তো আমার জন্যই লেখা;
প্রেমের একটা ব্যাপার লক্ষ করেছি শরীর-টাকে করে দেয় জলের ট্যাংক।
কথায় কথায় জ্বল এসে যায় চোখে ।
লংকা চিবোলে নাকের জল, আর প্রেমে পড়লে চোখের জল।
–আর সংসারে ঢুকলে চোখের জল নাকের জল দুটোই।