দেশলাইয়ের কাঠি সুকান্ত ভট্টাচার্য কাব্যগ্রন্থ- ছাড়পত্র সুকান্ত ভট্টাচার্যের অন্যান্য কবিতার মতো দেশলাইয়ের কাঠি কবিতা ও একটি রূপক ধর্মী কবিতা। সুকান্ত ভট্টাচার্য ছিলেন একজন সামাজিক চিন্তাধারার মানুষ। এবং তার লেখায় সমাজের বিভিন্ন দিক গুলি বিশেষ করে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের প্রতিদিনের দুঃখ, কষ্ট,Read more
দেশলাইয়ের কাঠি
সুকান্ত ভট্টাচার্য
কাব্যগ্রন্থ- ছাড়পত্র
সুকান্ত ভট্টাচার্যের অন্যান্য কবিতার মতো দেশলাইয়ের কাঠি কবিতা ও একটি রূপক ধর্মী কবিতা। সুকান্ত ভট্টাচার্য ছিলেন একজন সামাজিক চিন্তাধারার মানুষ। এবং তার লেখায় সমাজের বিভিন্ন দিক গুলি বিশেষ করে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের প্রতিদিনের দুঃখ, কষ্ট, অবহেলার কথা ই প্রাধান্য পেয়েছে তার কবিতায়। এই কবিতাও তার ব্যতিক্রম নয়।
আমি একটা ছোট্ট দেশলাইয়ের কাঠি
এত নগণ্য, হয়তো চোখেও পড়ি না;
তবু জেনো
মুখে আমার উসখুস করছে বারুদ—
বুকে আমার জ্বলে উঠবার দুরন্ত উচ্ছ্বাস;
আমি একটা দেশলাইয়ের কাঠি।
মনে আছে সেদিন হুলুস্থুল বেধেছিল?
ঘরের কোণে জ্বলে উঠেছিল আগুন –
আমাকে অবজ্ঞাভরে না-নিভিয়ে ছুঁড়ে ফেলায়!
কত ঘরকে দিয়েছি পুড়িয়ে,
কত প্রাসাদকে করেছি ধূলিসাত্
আমি একাই- ছোট্ট একটা দেশলাইয়ের কাঠি।
এমনি বহু নগর, বহু রাজ্যকে দিতে পারি ছারখার করে
তবুও অবজ্ঞা করবে আমাদের?
মনে নেই? এই সেদিন-
আমরা সবাই জ্বলে উঠেছিলাম একই বাক্সে;
চমকে উঠেছিলে–আমরা শুনেছিলাম তোমাদের বিবর্ণ মুখের আর্তনাদ।
আমাদের কী অসীম শক্তি
তা তো অনুভব করেছো বারংবার;
তবু কেন বোঝো না,
আমরা বন্দী থাকবো না তোমাদের পকেটে পকেটে,
আমরা বেরিয়ে পড়ব, আমরা ছড়িয়ে পড়ব
শহরে, গঞ্জে, গ্রামে– দিগন্ত থেকে দিগন্তে।
আমরা বার বার জ্বলি, নিতান্ত অবহেলায়-
তা তো তোমরা জানোই!
কিন্তু তোমরা তো জানো না:
কবে আমরা জ্বলে উঠব-
সবাই– শেষবারের মতো!
এখানে দেশলাই বলতে সাধারণ মানুষের কথা বলা হয়েছে। সাধারণ মানুষ নগণ্য হলেও তার মধ্যে রয়েছে প্রাণ, রয়েছে চেতনা আর সেই চেতনা দিয়ে অনেক কিছু করা সম্ভব। সমাজের নিচু শ্রেণীর মানুষ যারা সবসময় উচ্চশ্রেণীর কাছে অবহেলিত লুণ্ঠিত তারা চাইলে ধ্বংস করে দিতে পারে সমাজের প্রতিষ্ঠা কে। এবং এই নিম্ন শ্রেণীর মানুষ বারংবার গর্জে উঠেছে অত্যাচারের বিরুদ্ধে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে। তাই কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য উচ্চ শ্রেণীর মানুষের লক্ষ্য করে বলেছেন যদি অত্যাচার লুণ্ঠন পড়া শেষ না করে তাহলে ওই সাধারণ মানুষ গুলি বেরিয়ে পড়বে সবদিকে তাদের দাবি নিয়ে, শুরু হবে আন্দোলন অন্যায়ের বিরুদ্ধে। এবং সেই আন্দোলন হয়ে উঠবে অনেক ভয়ঙ্কর যা শেষ করে দিবে অন্যায়কারীদের।
English Transliteration:
Deshlaiyer kathi
Sukanto Bhattacharya
Ami ekta chotto deshlaiyer kathi
Eto naganno, hoyto chokheo podi na;
tabu jeno
Mukhe amar ushkush korche barud-
Buke amar jole uthbar duranta ucchash;
Ami ekta chotto deshlaiyer kathi
Mone aache shedin hulustul bedhechilo?
Ghorer kone jole uthechilo aagun-
Amake oboggabhore na-nibhiye chure felay!
Koto ghor ke diyechi puriye,
Koto prashadke korechi dhulishath
Ami ekai-chotto ekta deshlaiyer kathi.
Emni bahu nagar, bahu rajjoke dite pari charkhar kore
Tabuo obogga korbe amader?
Mone nei? ei shedin-
Amra shobai jole uthchilameki bakshe;
Chomke uthechilo-amra shunechilam tomader biborno mukher aartonad
Amader ki oshim shakti
ta to anubhab korecho barongbar
Tabu keno bujho na,
Amra bondi thakbo na tomader pocket e pocket e
Amra beriye porbo amra choriye porbo
Shohore, gonje, grame-diganta theke digante.
Amra barbar joli nitanto obohelay
ta to tomra janoi!
Kintu tumra to jano na:
Kobe amra jole uthbo-
Shobai-sheshbarer moto
Hridoy
রানার সুকান্ত ভট্টাচার্য রানার ছুটেছে তাই ঝুম্ঝুম্ ঘন্টা বাজছে রাতে রানার চলেছে খবরের বোঝা হাতে, রানার চলেছে, রানার ! রাত্রির পথে পথে চলে কোনো নিষেধ জানে না মানার । দিগন্ত থেকে দিগন্তে ছোটে রানার- কাজ নিয়েছে সে নতুন খবর আনার । রানার ! রানার ! জানা-অজানার বোঝা আজ তার কাঁধে, বোঝাই জাহাজ রানার চলেছেRead more
রানার
সুকান্ত ভট্টাচার্য
রানার ছুটেছে তাই ঝুম্ঝুম্ ঘন্টা বাজছে রাতে
রানার চলেছে খবরের বোঝা হাতে,
রানার চলেছে, রানার !
রাত্রির পথে পথে চলে কোনো নিষেধ জানে না মানার ।
দিগন্ত থেকে দিগন্তে ছোটে রানার-
কাজ নিয়েছে সে নতুন খবর আনার ।
রানার ! রানার !
জানা-অজানার
বোঝা আজ তার কাঁধে,
বোঝাই জাহাজ রানার চলেছে চিঠি আর সংবাদে;
রানার চলেছে, বুঝি ভোর হয় হয়,
আরো জোরে, আরো জোরে হে রানার দু্র্বার দুর্জয় ।
তার জীবনের স্বপ্নের মতো পিছে সরে যায় বন,
আরো পথ, আরো পথ – বুঝি লাল হয় ও – পূর্ব কোণ ।
অবাক রাতের তারারা, আকাশে মিট্মিট্ করে চায়;
কেমন ক’রে এ রানার সবেগে হরিণের মতো যায় !
কত গ্রাম, কত পথ যায় স’রে স’রে –
শহরে রানার যাবেই পৌঁছে ভোরে;
হাতে লন্ঠন করে ঠন্ঠন্, জোনাকিরা দেয় আলো
মাভৈঃ রানার ! এখনো রাতের কালো ।
এমনি ক’রেই জীবনের বহু বছরকে পিছু ফেলে,
পৃথিবীর বোঝা ক্ষুধিত রানার পৌঁছে দিয়েছে ‘মেলে’ ।
ক্লান্তশ্বাস ছুঁয়েছে আকাশ, মাটি ভিজে গেছে ঘামে
জীবনের সব রাত্রিকে ওরা কিনেছে অল্প দামে ।
অনেক দুঃখে, বহু বেদনায়, অভিমানে, অনুরাগে,
ঘরে তার প্রিয়া একা শয্যায় বিনিদ্র রাত জাগে ।
রানার ! রানার !
এ বোঝা টানার দিন কবে শেষ হবে ?
রাত শেষ হয়ে সূর্য উঠবে কবে ?
ঘরেতে অভাব; পৃথিবীটা তাই মনে হয় কালো ধোঁয়া,
পিঠেতে টাকার বোঝা, তবু এই টাকাকে যাবে না ছোঁয়া,
রাত নির্জন, পথে কত ভয়, তবুও রানার ছোটে,
দস্যুর ভয়, তারো চেয়ে ভয় কখন সূর্য ওঠে ।
কত চিঠি লেখে লোকে –
কত সুখে, প্রেমে, আবেগে, স্মৃতিতে, কত দুঃখে ও শোকে ।
এর দুঃখের চিঠি পড়বে না জানি কেউ কোনো দিনও,
এর জীবনের দুঃখ কেবল জানবে পথের তৃণ,
এর দুঃখের কথা জানবে না কেউ শহরে ও গ্রামে,
এর কথা ঢাকা পড়ে থাকবেই কালো রাত্রির খামে ।
দরদে তারার চোখ কাঁপে মিটিমিটি, –
এ-কে যে ভোরের আকাশ পাঠাবে সহানুভূতির চিঠি –
রানার ! রানার ! কি হবে এ বোঝা ব’য়ে ?
কি হবে ক্ষুধার ক্লান্তিতে ক্ষয়ে ক্ষয়ে ?
রানার ! রানার ! ভোর তো হয়েছে – আকাশ হয়েছে লাল
আলোর স্পর্শে কবে কেটে যাবে এই দুঃখের কাল ?
রানার ! গ্রামের রানার !
সময় হয়েছে নতুন খবর আনার;
শপথের চিঠি নিয়ে চলো আজ
ভীরুতা পিছনে ফেলে –
পৌঁছে দাও এ নতুন খবর,
অগ্রগতির ‘মেলে’,
দেখা দেবে বুঝি প্রভাত এখুনি –
নেই, দেরি নেই আর,
ছুটে চলো, ছুটে চলো আরো বেগে
দুর্দম, হে রানার ॥
Runner Chuteche Lyrics in Bengali
Poem- Runner
Poet- Sukanta Bhattacharya
Ranar chuṭeche ta’i jhumjhum ghanṭa bajche rate
Ranar choleche khoborer boja hate,
Ranar choleche, Ranar!
Ratrir pathe pathe chole kono nisedh jane na manar.
Diganta theke digante choṭe ranar-
Kaj niyeche se natun khobor anar.
Ranar! Ranar!
Jana-Ajanar
Boja aj tar kadhe,
Bojha’i jahaj ranar choleche chiti ar sangbade;
Ranar choleche, bujhi bhor hoy hoy,
Aro jore, aro jore he ranar durbar durjay.
Tar jibaner shopner moto piche sore jay ban,
Aro path, aro path – bujhi lal hoy o– pūrba koṇ.
Obak rater tarara, akashe mitmit kare chay;
Kemon kore-e ranar sobege hariṇer moto jay!
Koto gram, koto path jay sa’re sa’re –
Sahore ranar jabe’i pauche bhore;
Hate lanṭhan kore ṭhanṭhan, jonakira dey alo
Mabhaiḥ ranar! Ekhano rater kalo.
Emani kore’i jibaner bahu bacharke pichu fele,
Pr̥ithibir boja khudhita ranar pauche diyeche ‘mele’.
Klantashash chuyeche akash, maṭi bhije geche ghame
Jibaner sab ratrike ora kineche olpo dame.
Onek duḥkhe, bahu bedonay, abhimane, onurage,
Ghore tara priya eka sajjay binidra rat jage.
Ranar! Ranar!
E boja ṭanar din kobe sesh hobe?
Rata sesh hoye sūrja uṭhbe kobe?
Ghorete obhab; pr̥ithibiṭa ta’i mone hoy kalo dhowa,
Piṭhete ṭakar boja, tabu e’i ṭakake jabe na chowa,
Rata nirjan, pathe kata bhoy, tabu’o ranar choṭe,
Dasyur bhoy, taro cheẏe bhoy kokhan surya oṭhe.
Koto ciṭhi lekhe loke –
koto sukhe, preme, abege, smr̥itite, koto duḥkhe o sukhe.
Er duḥkher ciṭhi paṛbe na jani ke’u kono din’o,
Er jiboner dukko kebol janbe pother tr̥iṇa,
Er dukker kotha janbe na ke’u Sahare o grame,
Er kotha ḍhaka poṛe thakabe’i kalo ratrir khame.
Darade tarar chokh kape miṭimiṭi, –
E-ke je bhorer akash paṭhabe sohanubhutir ciṭhi –
Ranar! Ranar! Ki hobe e boja boye?
Ki hobe khudhar klantite khaye khaye?
Ranar! Ranara! Bhor to hoẏeche – akash hoyeche lal
Alor sparshe kobe keṭe jabe e’i duḥkher kal?
Ranar! Gramer ranar!
See lessSamay hoyeche natun khabar anar;
Sapather ciṭhi niye cholo aj
Bhiruta pichone fele –
Pauche da’o e natun khobar,
Agragatir ‘mele’,
Dekha debe bujhi prabhat ekhuni –
Ne’i, deri ne’i ar,
Chuṭe cholo, chuṭe cholo aro bege
Durdam, he ranar.